সিংহের শহরে – এক বাঘের জীবন :
২০০৬ সালে বাংলাদেশের এক বাঘের গুহা (বাংলালিংক – টাইগার’স ডেন) থেকে যখন সিঙ্গাপুর স্বপ্নের (সিংহের) শহরে এসেছিলাম তখন অনেক ভয় কাজ করেছিলো |
ইন্টারনেট এর জবস্ট্রিট এ জব সার্কলার দেখে ওই জব এ এপলাই করেছিলাম, তার পর তিন বার ইন্টারভিউ দেবার পর জানতে পারলাম জবটা হয়ে গেছে | ওরা জানালো আমার জন্য এমপ্লয়মেন্ট পাস এর এপলাই করা হয়েছে, ১ মাসের মধ্যে এমপ্লয়মেন্ট পাস ও হয়ে গেলো | তখন বাংলালিংক এ জব করতাম আর জবটা এতোটা এনজয় করতাম যে বাংলালিংক ছাড়তে আমার অনেক খারাপ লেগেছে | আমার বস ছিলেন ইজিপ্টিয়ান একজন ভদ্রলোক (নিজার আল আসাদ) | নিজার যখন জানলো আমি সিঙ্গাপুর চলে যাবো, আমাকে বললো নাজমুল কথা দাও বাংলাদেশে জব করলে বাংলালিংক এই জব করবে | আমি ওকে বলেছিলাম বস তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো, আমি ৫/১০/২০ বছর পর যখনই ব্যাক করি বাংলালিংকেই জব করবো |
বন্ধুদের সাথে কথা বলার পর জানতে পারলাম, আমার আরো তিন বন্ধুকে ওই জব এর জন্য ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছে কিন্তু তারা কেঊ তখন সিঙ্গাপুরের জন্য ইন্টারেস্টেড না | তারা এক জন কুয়েত যাবে (জব কন্ফার্ম), আরেক জন সুইডেন (MSc করতে), আরেক জন মালয়েশিয়াতে |
আর তাই সিঙ্গাপুরটা আমার ভাগ্যে পড়েছে | প্রথমত আমি একা তার পর আমার কোন বন্ধু-বান্ধব ছিলোনা সিঙ্গাপুরে, না কোনো আত্মীয় স্বজন | সিঙ্গাপুরের শিক্ষা, কাজের মান, ওদের কমিউনিকেশন আমাদের চেয়ে অনেক ফাস্ট | ওরা অনেক অর্গানাইজড, ডিসিপ্লিনড এবং অনেক ডিমান্ডিং | ওদের সাথে একসাথে কাজ করে, তাদের চাহিদা ও আশা অনুযায়ী কাজ ডেলিভারি করা একটু আমার জন্য কষ্ট সাধ্য ছিলো |
যদিও ২০০৩-২০০৬ পর্যন্ত ৩-৪ বার সিঙ্গাপুরে এসেছি ট্রেনিং করতে এবং প্রতি বারই ১-২ সপ্তাহ ছিলাম | কিন্তু জব নিয়ে কাজ করতে আসা ২০০৬ ই প্রথম |
আমি কাজ করতাম IT (Unix) নিয়ে | বিশেষ করে Sun Solaris, HP-UX এবং Redhat Linux নিয়ে, সাথে Sun Microsystems এর এন্ট্রি লেভেল থেকে হাইএন্ড যেকোনো সার্ভার, স্টোরেজ ও টেপ লাইব্রেরি ইমপ্লিমেন্ট ও সাপোর্ট এ পারদর্শী ছিলাম | তখন Unix এর ভালো মার্কেট ডিমান্ড ছিলো | মোটামটি সব এন্টার প্রাইস কোম্পানি তে বিসনেস ক্রিটিকাল এপ্লিকেশন চলে Unix সার্ভার এ | আর তখন মার্কেটে Unix এক্সপার্টিস খুব বেশি ছিলোনা |
কিন্তু সিঙ্গাপুরে কাজ করার ভয়টা আরও একটু বেশি ছিলো | যেমন ঢাকাতে কোনো প্রজেক্টে যখন গ্রামীণ ফোন বা একটেল বা সিটিসেল এ বিলিং সার্ভার বা জিপিআরএস সেটআপ করতাম, তখন আমার সাথে আমার আরো এক বন্ধু অন সাইট থাকতো আর ওভার দা ফোনে বস হেল্প করতো | আর তাই কোনো কাজে কখনো ভয় পেতাম না | জানি ঢাকায় সমস্যা হলে বস এসে হেল্প করবে কিন্তু সিঙ্গাপুরে ব্যাপারটা ছিলো একটু অন্য রকম |
সিঙ্গাপুরে মিডনাইট এ কল আসতো, starhub এর একটা বিলিং সার্ভার ক্রাশ করছে, একা একা যেতে হবে রিকভার করতে | গুগল ছাড়া কারো কাছে তেমন সাহায্য পেতাম না | সিঙ্গাপুরের কলিগকে কল দিলে বলতো তুমি যে কাজে এক্সপার্ট না সেই কাজ করতে যাবে না | কিন্তু আমি রিস্ক না নিয়ে, কাজ করতে না গেলে শিখবো কখন | কথায় আছে “নো রিস্ক, নো গেইন” | অফিস এর বস, কলিগ যে কাজেই ডাকতো চলে যেতাম | অভিজ্ঞতা না থাকলেও বলতাম আমি একাই পারবো | গুগল আর আমার নোটবুক এর টেকনিকাল লাইব্রেরি ই ছিল একমাত্র ভরসা |
একদিন রাতে কল আসলো সিংটেল এর একটা সার্ভার ক্র্যাশ করেছে, রিকোভার করতে যেতে হবে সিংটেল এর ডাটা সেন্টার এ | গিয়ে দেখি সারা নামের সুন্দরী একটি মেয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে …
চলবে …..!
সিঙ্গাপুরে আমার ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে ১৫ পর্বের লেখার আজ প্রথম পর্ব | ২০১৯ এ প্রবাস কথায় কয়েকটা পর্ব লিখার পর কোভিড আসায় বন্ধ করে দিয়েছিলাম | এখন থেকে প্রতি সপ্তাহে একটি করে পর্ব রিলিজ করবো | আমার লিখা ভালো লাগলে লাইক ও কমেন্টস করবেন | আর একটু বেশি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন |
আজ এই পর্যন্তই … পরবর্তী লেখা পড়ার আমন্ত্রণ রইলো |
নাজমুল খান
সিঙ্গাপুর থেকে |